ভিমরুলি ভাসমান বাজার
ভিমরুলির আশপাশের সব গ্রামেই অসংখ্য পেয়ারা বাগান। তাদের এ পেয়ারা বিক্রির জন্য বিখ্যাত ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার।
১৯৬২ সাল থেকে এর গোড়াপতন হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বাজারটি জমে ওঠে আসেপাশের সব বড় বাজারগুলো জখন পাকিস্তানিরা জ্বালিয়ে দেয় তখন এই বাজারটি জমে ওঠে।
ঝালকাঠি, বরিশাল আর পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার ২৬ গ্রামের প্রায় ৩১ হাজার একর জমির উপর গড়ে ওঠেছে পেয়ারা বাগান। আর এই পেয়ারা চাষের সঙ্গে প্রায় ২০ হাজার পরিবার সরাসরি জড়িত।
ঝালকাঠী জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের আঁকাবাঁকা ছোট্ট খালজুড়ে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। হাটটি সারা বছর বসলেও প্রাণ ফিরে পায় পেয়ারা মৌসুমে৷
ভিমরুলি হাট খালের একটি মোহনায় বসে। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। এই বাজারে পেয়ারা ছাড়াও নানারকম সবজি ও ফল বেচাকেনা হয়।
ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার
ভ্রমন বিস্তারিতঃ
১৯ জুলাই বিকালে চলে যাই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। বরিশালের লঞ্চ যদিও রাত ৯ টার পর ছাড়ে তবুও ডেকে সবার জন্য যায়গা নিতে হবে তাই কয়েক ঘন্টা আগেই যেতো হলো। খুব ইচ্ছা ছিলো নতুন লঞ্চ এ্যাডভেঞ্চার -৯ এ উঠার তাই দেরি না করে সরাসরি উঠে গেলাম এ্যাডভেঞ্চার -৯ এ। ১ম তলা বাদ দিয়ে চলে গেলাম ২য় তলায় সেখানে একে বারে সামনের দিকে যায়গা না পাওয়ায় পেছনের দিকে যায়গা নিতে হলো সবার জন্য। নতুন এই লঞ্চে ডেকের ভাড়া ২০০ টাকা। এসি ক্যাবিন ডাবল বেড ২০০০/- সিংগেল বেড ৯০০/১০০০। ৯ টা বাজতেই একে একে সব লঞ্চ ছাড়লেও এডভেঞ্চার-৯ তখনও ছাড়েনি। যানতে পারলাম এই লঞ্চ সবার শেষে ছাড়ে ৯ঃ৩০ এ।
এডভেঞ্চার-৯
কিন্ত না রাত যখন ঠিক ১০ টা তখন আমাদের লঞ্চ ছাড়লো। আমরা সবাই একই সাথে ডেকে যাচ্ছি। সবাই রাতে গরমের কারনে ডেক ছেড়ে চলে গেলো ছাদে। ব্যাগ আর মোবাইল পাহাড়ার জন্য রয়েগেলাম আমি আর Ashraful Alam Mithu ভাই। দুই ভাই একটু বাতাস খেতে খেতে গল্প করার জন্য লঞ্চের কিনারায় গেলাম। হটাৎ বৃষ্টির ঝাপটা গায়ে লাগলো। কিছু খনের মধ্যে দেখলাম ছাদ থেকে সবাই তরিঘরি করে নামছে। মুহুর্তেই সবাই ডেকে ফিরে আসলো। এবার আমরা কজন চলে গেলাম লঞ্চের সামনে দোতলায়। বজ্রপাত হচ্ছে দূরে। সেই এক দৃশ্য মাঝে মধ্যেই বজ্রপাতের কারনে অন্ধকার নদী জ্বলে উঠছে যেন। হঠাৎ চোখে পরলো আমাদের আগে ছেড়ে যাওয়া পারাবত ১২ লঞ্চ টিকে এডভেঞ্চার ৯ ওভারটেক করছে। পানিতে দেখতে থাকলাম গতীর খেলা। একে একে কীর্তনখোলা-২, সুন্দরবন-১১ সবাইকে ওভারটেক করে এডভেঞ্চার-৯ এগিয়ে যাচ্ছে।
সকাল ৪ টা বাজতেই গার্ডেরা বাশিবাজিয়ে সবাইকে উঠিয়ে দিলো। আমরা বরিশালে চলে এসছি। সবাইকে লঞ্চে রেখে চলে এলাম টার্মিনালের বাইরে গাড়ি ঠিক করার জন্য। টার্মিনালের বাইরে মাহেন্দ্র গুলোর ভাড়া শুনে খটাক লাগলো। তাই পানি কিনতে গিয়ে এক চাচার কাছে বাস স্ট্যান্ড এর বেপারে যানতে পারলাম। এরপর সবাই বের হয় ঘাট থেকে।
টার্মিনাল থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে চলে গেলাম নতুল্যা বাজার বাস স্ট্যান্ড ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা নিলো। যদিও স্থানিও দোকান্দার চাচা বলে ছিলো ১০ টাকা ভাড়া। ১০ মিনিটে পৌছে গেলাম সেখানে। নেমে সবাই নাস্তা করলো বাস স্ট্যান্ড এ। ঝালকাঠি, পিরোজপুর এর বাসগুলো এখান থেকে ছাড়ে। আমরা ঝালকাঠি গামী একটি বাসে উঠলাম নামবো বানারিপারা বাস স্ট্যান্ড, ভাড়া ৩০ টাকা। বাস ছাড়লো সময়মতই ৬ঃ৪৫ এ।
যাবার পথেই দেখতে পেলাম দুর্গার সাগর আর গুঠিয়া মসজিদ। প্রায় ৩০ মিনিট পর নামলাম বানারিপারায়।
বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকসা করে চলে গেলাম ফেরিঘাটে ভাড়া ১৫ টাকা। ফেরিঘাটে চললো ট্রলার ভাড়া করার প্রতিযোগিতা। অবশেষে একটি মাঝারি ট্রলার নিলাম। দামাদামি হলো না মাঝি মুরব্বি বললেন যা দেওয়ার পরে দিতে তার দাবি নেই। পরে অবশ্য তাকে ১২০০ টাকা দেয়া হয়ে ছিলো।
আমরা যাচ্ছি সন্ধা নদী দিয়ে আঘর ভিমরুলি বাজার। অনেকটা নদী পেরিয়ে খাল চার পাশে সবুজের সমারোহ। দুই পাশে নদী এলাকার মানুষগুলোর ঘর বারি আর বিভিন্ন গাছ। কখনো পানের বরত কখনো আমরা বাগান।আবার কখনো চোখে পরে চালতা সহ বিভিন্ন ফলের গাছ। নয়টা বাজেনি আমরা চলেলাম কুরিয়ানা পেয়ারা বানাগানে। বাগানে মালিক পেয়ারা পারছিলো হাটে যাবার জন্য। আমাদের সবাইকে সে পেয়ারা খাওয়ালো।
আমরাও সৌজন্য বোধে তার কাছ থেকে ৮/১০ কেজির মত পেয়ারা কিনে নিলাম দাম রাখলো ১৫০ টাকা। বাগানে ঘুরে এবার আমরা যাচ্ছি ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারার বাজারের দিকে। সময় সকাল ৯ টা চলে এলাম ভিমরুলি বাজার। বাজারে নেমে সবাই ঘুরা ঘুরি করছে। কেউ কিনছে পান কেউ আমরুজ আবার কেউ কিনছে বিশাল আকৃতির লেবু। সবই ফ্রেস জিনিস বিন্দু মাত্র ভেজাল নেই। বাজার ঘুরলাম এখন যাবো কুরিয়ানা নৌকার বাজার দেখতে।
ট্রলার বেশি বড় না হওয়া সব খানেই অনায়াসেই যাওয়া যাচ্ছে। কুরিয়ানা নৌকা ঘাটে ব্র্যান্ড নিউ নৌকা সাজানো দাম ৩ থেকে ৫০০০ টাকা। এগুলো কিনবে পেয়ারা বিক্রেতারা। কুরিয়ানায় একটি ঘাটে ট্রলার ভেরানো হলো উদ্দেশ্য পানিতে গোসল করা। মহিলা আর বাচ্চারা বাদে সবাই নেমে গেলাম পানিতে খালের ওপারে স্কুল মাঠে কিছু ছেলে রা ফুবল খেলছে সাতরে ওপারে গিয়ে সবাই নেমে গেলো তাদের সাথে ফুটবল খেলতে। নিজে না নেমে খেলা উপভোগ করলাম। খেলা জমলো খুব। যদিয়ো ছেলে পুলের কাছে হারলো আমাদের ভাই দল। খেলা ও গোসল শেষে আমরা ফিরলাম আবার বানরিপারা ঘাটে। দুপুর ১ঃ৪৫ মিনিট। বানরিপাড়া ঘাটে নেমে আগে খাওয়াদাওয়া। গরম আর খুধায় খেলোয়ার ও পানিতে নামা দল একে বারে কাহিল। অবশেষে চিংড়ি তরকারি দিয়ে খাওয়া হলো সাথে ডাল আর সবজি। দেশি চিংড়ির স্বাদটাই ভিন্ন। খাবার শেষে ট্রলার ওয়ালাকে বিদায় দিয়ে রিকশায় চলে গেলাম বানরিপাড়া মাহেন্দ্র স্ট্যান্ড এ। যাবো গুঠিয়া মসজিদ ভাড়া ২০ টাকা করে। লোকাল বাসে গেলে ১৫ টাকা। গুটিয়া মসজিদটি যেমন বড় দেখতে অনেক সুন্দর। (গুটিয়া মসজিদ বেলা ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত আর বিকাল ৪ টা থেকে খোলা থাকে) গুটিয়া মসজিদ থেকে চলে গেলাম দূর্গা সাগর ভাড়া মাহেন্দ্রতে ১০ টাকা করে। মাহেন্দ্রতে ৮ জন বসা যায়।

দূর্গাসাগর
দূর্গাসাগর এসে সবার জন্য টিকিট কাটা হলো। প্রবেশ ২০ টাকা, ৫ -১২ বছর বাচ্চা ১০ টাকা। দূর্গাসাগরের পরিবেশ খুবই মনোরম। এখানে রয়েছে হরিণ। আর সুবিশাল লেকে মাছ ধরতে সেন অনেকেই প্রতি ছিপ ১০০০ টাকা। দূর্গাসাগরে সবাই ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম নিলো। কেই কেউ আবার মেতে উঠলো শিশুদের সাথে ফুটবল খেলায়। বিকাল ৫ টা যেতে হবে লঞ্চ টার্মিনালে ২ টা মাহেন্দ্র রিজার্ভ করাহলো ২০০ টাকরে ভাড়া। টারমিনালে গিয়ে সবাই আবার এডভেঞ্চার-৯ এ। আর কেনোই বা অন্য পছন্দ আমরাতো এডভেঞ্চার প্রেমি। ডেকে যারা ছিলাম চললো কার্ড খেলা। সারারাত খেলাগেলো না কারন সবাই ক্লান্ত অনেক। একা জেগে রইলাম জীবনে প্রথম উপভোক করলাম লঞ্চের ডেকের মজা। নদী উত্তাল থাকায় সদরঘাট পৌছাতে ৫ঃ৩০ বাজলো প্রায়। সবাইকে পেছনে ফেলে আমাদের এডভেঞ্চার-৯। বিদায়ের পালা, সবার মন খারাপ। কিন্তু ক্লান্তি ও জীবিকার কাছে সবার হার মানতে হলো। তবে নতুন এক আশায় সবাই বিদায় নিলো ' আবার দেখা হবে কোন এক এডভেঞ্চারে। এডভেঞ্চার প্রেমিদের কোন বাধাই আটকাতে পারেনা। তাদের কোনপ্রেমই আটকাতে পারে না। পরিবার, জীবিকা, শারীরিক বাধা সকল কিছু জয় করতে পারে।
ভালো থাকবেন এডভেঞ্চার প্রেমিরা।